প্রতিষ্ঠানিক ইতিহাস

দেশের দক্ষিন পশ্চিম ভূখন্ডের সর্বশেষ জেলার নাম সাতক্ষীরা,এই জেলারই দক্ষিনের সর্বশেষ থানার নাম শ্যামনগর। শ্যামনগর থানার দক্ষিন প্রান্ত দিয়ে গড়ে উঠা সর্বশেষ লোকালয়ের ধার দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট নদীর অপর পারে বিধাতার অকৃপন দান, প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য্যমন্ডিত রুপসী সুন্দরবন অবস্থিত। সেই জন্য শ্যামনগর থানা বাংলাদেশের মানচিত্রে গর্বভরে মাথা উচু করে নিজের অবস্থান ঘোষনা করছে। এই শ্যামনগর থানা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার সোজা পূর্বদিকে ১০নং আটুলিয়া ইউনিয়নের প্রানকেন্দ্র নওয়াবেঁকী। থানা সদরের সাথে নওয়াবেঁকীর সরাসরি পাকা সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। দেশের অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হলেও নওয়াবেঁকী সহ পার্শ্ববর্তী গ্রাম সমূহে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকায় এলাকার মানুষের জীবন ধারায় একটা পরিবর্তন এসেছে এবং তারা গ্রামে বসবাস করেও নগর জীবনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। শ্যামনগর থানা বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানকার নদনদীর পানি অত্যধিক লবনাক্ত। ভূগর্ভস্থ পানিও লবনাক্ত হওয়ায় এখানে সেচ দ্বারা চাষাবাদ সম্ভব হয় না। কেবল মাত্র বর্ষা মওসুমে একবার আমন ধানের চাষ হয়। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত এ অঞ্চলে ভারী কোন শিল্প বা কল কারখানা গড়ে না উঠায় এবং এক ফসলের দেশ হওয়ায় এতদাঞ্চলের মানুষের বেশীরভাগ সময় কাজ না পেয়ে বেকার থাকতে হয়।ফলে তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি অত্যন্ত নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে। কিছু মানুষ ব্যবসা বাণিজ্য করে ভাগ্য ফিরালেও এ এলাকায় আজ ও প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। এমতাবস্থায় কম খেয়ে,কম পরে বাড়ীতে থেকে এস.এস.সি পাশ করা ছেলে মেয়ের সম্মানিত গরীব অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদেরকে বাহিরে রেখে কোন কলেজে পড়াশুনার ব্যবস্থা করতে প্রায়সই অপারগ হন।ফলে বেশীর ভাগ ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষা লাভে বঞ্চিত হয়ে ঝরে পড়ে। ১৯৭২ সালে শ্যামনগর থানা সদরে উচ্চ শিক্ষার জন্য শ্যামনগর মহসীন ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৩ সালে ‍"নওয়াবেঁকী মহাবিদ্যালয়" প্রতিষ্টিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মহসীন ডিগ্রী কলেজ ছিল এতদাঞ্চলের একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আটুলিয়া ইউনিয়ন শ্যামনগর থানার শিক্ষায় অগ্রগন্য ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ইউনিয়নে ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যায়ল, ১টি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ১টি সিনিয়র মাদ্রাসা, ১টি দাখিল মাদ্রসা, ২টি মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল থাকায় শিক্ষার একটি অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্য হতে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এবং ১টি দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আটুলিয়া ইউনিয়নের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব জি,এম,আব্দুল কাদের বেশ কিছুদিন ধরে এস.এস.সি পাশের পর ঝরে পড়া ঐ সমস্ত ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা চালু রাখার বিষয় বিবেচনায় রেখে সময়ের প্রয়োজনে উচ্চশিক্ষা প্রসারের জন্য নওয়াবেঁকীতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সক্রিয় চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন। তৎকালীন সময়ে শ্যামনগর থানার সম্মানিত থানা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আবুল কাশেম মাসুদ তিনিও এই চিন্তা চেতনার সাথে একাত্নতা ঘোষনা করে কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহনের জন্য সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব জি,এম,আব্দুল কাদের এর সাথে মতবিনিময় করেন। তাছাড়া ও শ্যামনগর মহসীন ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সর্বজন শ্রদ্ধেয় জনাব, জি,এম, আব্দুল হক এর সাথে এ বিষয়ে আলাপ করলে তিনি আন্তরিক উৎসাহ দেখান ও সবধরনের সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেন। এমতাবস্থায় চেয়ারম্যান জনাব জি,এম,আব্দুল কাদের ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান জনাব ফজলুল হক স্থানীয় সকল বিদ্যোৎসাহী মানুষের সাথে মতবিনিময় পূর্বক যথাক্রমে আহবায়ক ও যুগ্ম-আহবায়ক হিসাবে কলেজ প্রতিষ্ঠার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহনের উদ্দেশ্যে ইংরেজী ২১/০৮/১৯৯৩ তারিখে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী নওয়াবেঁকী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সর্বস্তরের জনগনের এক সভা আহবান করেন। ২১শে আগষ্ট ১৯৯৩ সকাল ১০টায় সভা শুরু হয়। উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তৎকালীন সাতক্ষীরা-৫ আসন থেকে নির্বাচিত মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব গাজী নজরুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি হিসেবে মহসীন ডিগ্রী কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ জনাব জি,এম, আব্দুল হক ও সম্মানিত থানা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আবুল কাশেম মাসুদ, থানাস্থ সকল ইউনিয়ন পরিষদ সমূহের সম্মানিত চেয়ারম্যান মহোদয়গন, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং আশপাশের সকল স্কুলগুলোর শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষকগন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সভায় উপস্থীত হন। এলাকার সর্বস্তরের জনগনের উপস্থিতিতে সভাস্থানে এক অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নওয়াবেঁকী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক জনাব এম,এম,শামশুল হক। সভায় মাননীয় প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি বৃন্দ, আহবায়ক-দ্বয় সহ অতিথি বৃন্দ ও স্থানীয় উদ্যোগী গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নওয়াবেঁকীতে কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। এবং এ ব্যাপারে উপস্থীত উৎসাহী জনগনের মতামত জানতে চাওয়া হলে সভাস্থলের সবাই দু'হাত উচু করে সমস্বরে অত্যান্ত আবেগ আপ্লুত কন্ঠে কলেজ প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরালো সমর্থন প্রকাশ করেন। অতঃপর কর্তৃপক্ষ খুটিনাটি সকল বিষয় আলাপ আলোচনান্তে আজ থেকেই নওয়াবেঁকী কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষনা করলে উপস্থিত জনতা উল্লাসে ফেটে পড়েন। একই দিনে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি, ৬৩ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি, ৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী সাব কমিটি গঠিত হয়। নিজস্ব জায়গা না হওয়া পর্যন্ত নওয়াবেঁকী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি অতিরিক্ত ভবনে কলেজের কাজকর্ম চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পর থেকে কলেজের সভাগুলোতে স্থানীয় জনগন ব্যাপক ভাবে অংশ গ্রহন করতে থাকেন এবং প্রয়োজনীয় জমি ও টাকা দান করেন। সর্বমোট ১৬ জন সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জমি বা নগদ টাকা প্রদান করে আজীবন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন। এবং শতাধিক দাতা সদস্য ৫০/= টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০/= টাকা পর্যন্ত দান করেছেন।কলেজে দানকৃত সর্বমোট জমির পরিমান ৪.১০ একর। আজ অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সাথে সকল মহৎপ্রান সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্য বৃন্দকে স্মরন করি, বিশেষ করে সেই দাতা সদস্যকে যিনি রিক্সা ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের কষ্টের সামান্য আয় থেকে ১০০/= টাকা প্রফুল্লচিত্তে দান করেছিলেন। তার এ দান বৃথা যায়নি "নওয়াবেঁকী মহাবিদ্যালয়" আজ সুপ্রতিষ্ঠিত।